সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
চোরাচালান ও চাঁদাবাজদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে সুনামগঞ্জের চানপুর ও টেকেরঘাট সীমান্ত। এই দুই সীমান্তে শুল্কস্টেশন থাকার পরও প্রতিদিন রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে অবাধে কয়লা, চুনাপাথর, বিড়ি, মদ, গরু ও ঘোড়াসহ চিনি, পেঁয়াজ পাচার করে বিভিন্ন হাট-বাজারে ওপেন বিক্রি করা হচ্ছে। সেই সাথে পাচারকৃত অবৈধ মালামাল থেকে বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা চাঁদা। এই দুই সীমান্তে চোরাচালান করতে গিয়ে গত ৬ মাসে ১০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তাই প্রশাসনের উপরস্থ কর্মকর্তাদের সহযোগিতা জরুরি প্রয়োজন। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার (১২ জুলাই) রাত ৮টা থেকে গত শনিবার (১৩ জুলাই) সকাল ১১টা পর্যন্ত জেলার তাহিরপুর উপজেলার চানপুর সীমান্তের গারোঘাট, নয়াছড়া, রজনী লাইন ও টেকেরঘাট সীমান্তের বড়ছড়া, বুরুঙ্গাছড়া, লাকমা ও নীলাদ্রী লেক এলাকা দিয়ে পৃথকভাবে প্রায় কোটি টাকার কয়লা ও চুনাপাথরসহ মরাসিংগেল, বালি পাচার করেছে বিখ্যাত চোরাকারবারি আক্কল আলী, রুবেল মিয়া, আমির আলী, মহিবুর, সাইদুল, কামাল মিয়া, হারুন মিয়া, নাসির মিয়া, নজরুল মিয়া, সাইকুল মিয়া, নজির মিয়া, রুসমত আলী, জামাল মিয়া ও কালাম মিয়া গং। অন্যদিকে রাজাই, কড়ইগড়া ও বারেকটিলা এলাকা দিয়ে চোরাকারবারি শহিদ মিয়া, জম্মত আলী, শাহিবুর মিয়া, রফিকুল, বুটকুন মিয়া গং ভারত থেকে গরু, চিনি, পেঁয়াজ ও ফোসকা, নাসির উদ্দিন বিড়ি, মদ, গাঁজা, ইয়াবা পাচার করে বাদাঘাট বাজার সংলগ্ন কামড়াবন্দ গ্রামে অবস্থিত গডফাদার তোতলা আজাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। এ খবর পেয়ে রাত ৯ টায় স্থানীয় জনতা গডফাদার তোতলা আজাদের বাড়িতে গিয়ে হানা দেয়। কিন্তু চালাক গডফাদার তোতলা আজাদ জনতার উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ির পিছনের দেয়াল টপকে পালিয়ে যায়। কিন্তু এ ব্যাপারে বিজিবি ও পুলিশের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়ার খবর পাওয়া যায়নি। অথচ তাহিরপুর থানায় ওসি আব্দুল লতিফ তরফদার, টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্পে নায়েক সুবেদার সাইদুর রহমান সাইদ ও চানপুর বিজিবি ক্যাম্পে নায়েক সুবেদার মোহাম্মদ আলী দায়িত্বে থাকাকালীন সময় বন্ধ ছিল চোরাচালান ও চাঁদাবাজি। অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়েছিল অবৈধ মালামাল ও যানবাহনসহ তোতলা আজাদের ছেলে শিহাব সারোয়ার শিপুকে। কিন্তু ওই ৩ কর্মকর্তা অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ার পর গত ৫ বছর যাবৎ দুই সীমান্তে চোরাচালান ও চাঁদাবাজি বাণিজ্য জমজমাট হয়ে উঠে, হয়না কোন অভিযান।
জানা গেছে, রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে পাচারকৃত অবৈধ কয়লা ও চুনাপাথর টেকেরঘাট সীমান্তের নিলাদ্রী লেকপাড়ে অবস্থিত মুজিবুরের ডিপু, অসিউর রহমানের ডিপু ও আবুল হোসেনের ডিপুসহ বড়ছড়া পূর্বপাড়া মসজিদের উত্তর পাশে অবস্থিত মাফিকুলের ডিপু, শাহ পরানের ডিপু, সোহেল খন্দকারের ডিপু, রফিকুলের ডিপু, নবারের ডিপু, আক্কল আলীর ডিপু, রাজুর বডিংয়ের পাশে, ভাংগারী সোহেলের ডিপু, রমজানের দোকানের পাশেসহ দুই বিজিবি ক্যাম্পের আশপাশে মজুত রেখে ওপেন বিক্রি করা হচ্ছে। এবং পাচারকৃত প্রতিটন অবৈধ কয়লা থেকে বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে ৩ হাজার ৫শ’ টাকা, প্রতিটন চুনাপাথর থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা, মরাসিংগেল পাথর থেকে ৮শ’ টাকা, বালি থেকে ৭শ’ টাকা, প্রতিবস্তা চিনি থেকে ৩শ’ টাকা, প্রতিবস্তা পেঁয়াজ থেকে ২শ’ টাকা, ১টি গরু থেকে ৮ হাজার টাকাসহ মাদকদ্রব্য ও বিড়ি থেকে মাসিক হারে চাঁদা উত্তোলন করে সোর্স আক্কল আলী, রতন মহলদার, কামরুল মিয়া, কামাল মিয়া, জামাল মিয়া, রুসমত আলী, নাসির মিয়া ও গডফাদার তোতলা আজাদ। তারা চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করে এখন কোটিপতি। তারপরও প্রশাসন নীরব।
এ ব্যাপারে উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্মার ও আওয়ামী লীগ নেতা কফিল উদ্দিন বলেন, চানপুর সীমান্ত দিয়ে গরু, চিনি ও পেঁয়াজসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য ওপেন পাচার করা হয়। কিন্তু বিজিবি ও পুলিশ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয় না। সুনামগঞ্জ জেলার সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া বলেন, রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে কয়লা, পাথর ও গরুসহ বিভিন্ন মালামাল পাচারের বিষয়ে টেকেরঘাট ও চানপুর ক্যাম্প কমান্ডারদের বারবার জানানোর পরও তারা কোন পদক্ষেপ নেয় না। চানপুর বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার আব্বাস আলী (০১৭৬৯-৬১৩১২৯) বলেন, সীমান্ত চোরাচালানের বিষয়ে আমার কিছু করার নাই। টেকেরঘাট কোম্পানীর কমান্ডার দীলিপ কুমার (০১৭৬৯-৬১৩১২৮) বলেন, চোরাচালানের খবর পেলে টহলে থাকা সদস্যদের জানাই, তারা পদক্ষেপ নেয়।

উত্তর বড়দল ইউপি মেম্মার ও আ’লীগ নেতা কফিল উদ্দিন বলেন, চানপুর সীমান্ত দিয়ে গরু, চিনি ও পেঁয়াজসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য ওপেন পাচার করা হয়। কিন্তু বিজিবি ও পুলিশ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয় না
সুনামগঞ্জের সীমান্ত চোরাকারবারি চাঁদাবাজের স্বর্গরাজ্য


নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ